পড়ালেখা ও বড় হয়ে ওঠা

আমার প্রথম শহর

Map of DNJ

বাংলাদেশের উত্তরে, দিনাজপুর। ভূগোলের ভাষায় অক্ষাংশ আর দ্রাঘিমাংশ বলতে হয় — ২৫.৬৩° উত্তর এবং ৮৮.৬৫° পূর্ব। আমার প্রথম জীবনের শহর। সেই ষাটের দশকের একদম শেষে শুরু। শেষ আশির দশকের শেষের দিকে। আঠার বছর। এর মাঝে আমার বেড়ে ওঠা, পৃথিবীর সবকিছু আবারও নতুন ভাবে আবিষ্কার করা, অ-আ-ক-খ থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য দ্বিতীয় শহর ঢাকায় আসা পর্যন্ত, একেবারে পাকাপাকিভাবে থাকার জন্য। শহরের পশ্চিম প্রান্তে, অনেক পুরনো বাঁধের ভেতরে, নদীর দিকে, তার অনেক আগেই অবশ্য দ্বিতীয় বাঁধ তৈরি হয়ে গেছে, আমার বড় হয়ে ওঠা, বাস। জায়গার নাম বালুয়াডাঙ্গা, কারণ নদীর বালুময় জায়গায় গড়ে ওঠা মানুষের বসবাস, একদিনের নয়, অনেক অনেক দিনের।

আমার প্রাথমিক স্কুল

St Joseph's School, Dnj

দিনাজপুর সেন্ট জোসেফ'স প্রাথমিক স্কুল। এখানেই আমার পড়ালেখার আনুষ্ঠানিকতার শুরু। স্কুলটির শুরু খ্রিস্টান পাদ্রিদের হাতে ১৯৫১ সালে। এখানে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত আমার পড়ালেখা, প্রথম শ্রেণির আগের এক বছর ধরে তিন বছরের কিছু বেশি। স্মৃতিমেদুরতায় ডুবে যাই স্কুলটির কথা মনে হলে। ঘুরে দেখতে ইচ্ছে হয়, সাহস হয় না, স্বপ্নভঙ্গের ভয়ে।

আমার মাধ্যমিক স্কুল

Dinajpur Zilla School

দ্বিতীয় স্কুল হল দিনাজপুর জিলা স্কুল। অনেক দিনের পুরনো। পৌরসভার সাথে লাগানো, হয়ত বা স্কুলটার সাথেই পৌরসভাটা লাগানো। পরেরটাই ঠিক, কারণ পৌরসভাটা বেশ পরে বানানো। পুরনো দালান আর নেই, নেই সেই নিচু লোহার গেট। তবুও ভাবতে ভাল লাগে গেটের সামনে দু'পাশের দেবদারু গাছ, যার একটি একদিন ঝড়ে ভেঙ্গে পড়েছিল আমরা স্কুলে পড়বার সময়, দক্ষিণ ধারে সেই বটগাছ, উঁচু ছাদের পুরনো দালান, পুকুর, আর মিলনায়তন। জুলুম সাগরের পাড়ে ১৮৪৮-এ প্রতিষ্ঠিত দিনাজপুর স্কুল নামের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরিয়ে বর্তমান জায়গায় নেওয়া হয় ১৮৫৪ সালে, দিনাজপুর জিলা স্কুল হিসেবে। ইতিমধ্যে স্কুলটি সরকারি বিদ্যালয় হয় ১৮৫২ সালে। ১৮৫৭ সালে স্কুলটি পূর্ণাঙ্গভাবে সরকারের শিক্ষা বিভাগের নিয়ন্ত্রণে আসে, অর্থাৎ জিলা স্কুলে পরিণত হয়। ১৯৩২ সালে নির্মিত রঙিন ভারতবর্ষের মানচিত্রটি এখনও আছে।

আমার কলেজ

Dinajpur College

দিনাজপুর সরকারি কলেজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতার রিপন কলেজ শাখা রিপন কলেজ হিসেবে দিনাজপুরে সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৯৪৬ সালে কলেজটি আবার কলকাতায় ফিরিয়ে নেওয়া হলে নামকরা দু'জন শিক্ষক দিনাজপুরেই রয়ে যায়, যাদের মধ্যে একজন গোবিন্দ চন্দ্র দেব। গোবিন্দ চন্দ্র দেব তখন প্রতিষ্ঠা করে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, চালু হয় জিলা স্কুলের পাশে মুসলিম হোস্টেলে। ১৯৫৩ সালে কলেজটিকে নিমনগরে নিজস্ব ভবনে সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৯৬৮ সালে নিমনগরের ভবন দিনাজপুর মহিলা কলেজকে ছেড়ে দিয়ে দিনাজপুর সরকারি কলেজ তার বর্তমানের জায়গা শহরের উত্তরে স্থানান্তরিত হয়। কলেজের লাইব্রেরি পুরনো বইয়ে সিল দেখা যায় সুরেন্দ্রনাথ কলেজের সম্পত্তি হিসেবে।

আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন চারপাশে ছিল না স্বাধীনতা খর্ব-করা কোনও দেয়াল। পড়া ফাঁকি দিয়ে মাঠে গাছের নিচে শুয়ে বেশ দেখা যেত বড় রাস্তার যাওয়া-আসা। সেই পুকুর পাড়, মেহগনি গাছ, বাগান, গাছের তলে বসে আড্ডা, বেশ ছিল।

আমার বিশ্ববিদ্যালয়

Dhaka Univ Arts Faculty

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কলা ভবনের দোতালার উত্তর-পশ্চিম অংশ, ইংরেজি বিভাগ। ১৯২১ সালে চালু হওয়া প্রথম ১২টি বিভাগের একটিতে। শুরুটা মেডিকেল কলেজের হস্টেলে। পরে হলিক্রস চার্চের পেছনে তেজকুনিপাড়ার একটি বাড়িতে, বাঁশঝাড়ে পাখা-ঝাপটানো সন্ধ্যা। এরপর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটে হল, জিয়া হলে দিন কয়েক আর পুকুর পাড়ের শহীদুল্লাহ্ হলে অনেকটা সময়।

 

 

 

 

সম্পাদনা: ১১ জুলাই ২০১১